অন্ধকার থেকে আলোতে – এক সংগ্রামী নারীর গল্প

অন্ধকার থেকে আলোতে – এক সংগ্রামী নারীর গল্প


**ভূমিকা:**

এই গল্পটি হলো নীলার, এক গ্রামের অল্পশিক্ষিত মেয়ে যার জীবন শুরুর থেকেই ছিল কঠিন। বাবা-মায়ের অকাল মৃত্যু, দরিদ্রতার চাপ, আর নারী হিসেবে সমাজের নানা বাঁধা পেরিয়ে একদিন সে নিজের শক্তিতে আলো খুঁজে পেলো। এই গল্পটি তার জীবনের যুদ্ধ, সংগ্রাম আর বিজয়ের।




** ছোটবেলার চ্যালেঞ্জ**


নীলার বয়স যখন মাত্র আট বছর, তখনই তার বাবা-মা এক দুর্ঘটনায় মারা যান। সে আর তার ছোট ভাই গ্রাম্য আত্মীয়দের কাছে আশ্রয় পায়, কিন্তু সেখানে তাদের জীবন ছিল কঠিন। নীলাকে খুব অল্প বয়স থেকেই বাড়ির কাজকর্মে লেগে থাকতে হত। তবে তার মনের মধ্যে সবসময়ই একটা সুপ্ত ইচ্ছা ছিল—পড়াশোনা করার এবং জীবনে কিছু করার।


** শিক্ষার পথে প্রথম পদক্ষেপ**


আশেপাশের মানুষজন যখন মেয়েদের পড়াশোনাকে গুরুত্ব দিত না, তখন নীলা একাই প্রতিজ্ঞা করল সে কিছু একটা করবে। সে রাতে অন্যদের বাড়িতে কাজ করে কিছু টাকা জমাতে শুরু করল এবং গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হলো। বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা তার দৃঢ় ইচ্ছাশক্তিতে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং তাকে বইপত্র দিয়ে সাহায্য করতেন।


** প্রাথমিক পরীক্ষার সাফল্য**


পরীক্ষার আগে নীলার দারিদ্র্য তাকে বাধা দিলেও, সে হাল ছাড়েনি। পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে সে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তার সাফল্যে গ্রামের লোকেরা অবাক হয়, আর স্কুলের শিক্ষকেরা তাকে আরও উৎসাহিত করেন। নীলা তখন বুঝতে পারে, তার জন্য আরও বড় কিছু করার দরজা খোলা আছে।


** সমাজের বাধা আর সংগ্রাম**


কিন্তু নীলা যখন উচ্চমাধ্যমিকের জন্য শহরের কলেজে যেতে চাইল, গ্রামের মানুষ তাকে বাধা দেয়। তারা বলে, "মেয়েদের এত পড়াশোনার দরকার নেই।" তবুও, নীলা সমাজের বাধাকে উপেক্ষা করে নিজের জন্য পথ খুঁজতে থাকে। শহরে গিয়ে সে নিজের খরচ চালানোর জন্য একটি সেলাইয়ের কাজের প্রশিক্ষণ নেয় এবং সেখানে কাজ করে লেখাপড়া চালিয়ে যায়।


**নিজের ব্যবসার শুরু**


নীলা সেলাইয়ের কাজ এত ভালোভাবে রপ্ত করে যে ধীরে ধীরে নিজের ছোট একটি সেলাইয়ের ব্যবসা শুরু করে। তার পরিশ্রম আর মেধা তাকে সফলতা এনে দেয়। গ্রামের মানুষ যখন তার এই পরিবর্তন দেখে, তখন অনেকেই তাকে সমর্থন করতে শুরু করে।


**দৃশ্য ৬: প্রেরণাদায়ক নারী**


কয়েক বছরের মধ্যে নীলা তার গ্রামের নারীদের জন্য একটি কর্মশালার আয়োজন করে, যেখানে সে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে। নীলা এখন কেবল নিজের জন্য নয়, বরং নিজের গ্রাম ও সমাজের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।


**উপসংহার:**


নীলার গল্পটি আমাদের শেখায় যে দারিদ্র্য, সমাজের বাধা, আর প্রতিকূলতা কখনোই এক ব্যক্তির সাফল্যের পথে অন্তরায় হতে পারে না। ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে যে কোনো সংগ্রামী নারীও সমাজে নিজের জায়গা করে নিতে পারে। নীলা এখন তার গ্রামের নারীদের জন্য আলোর দিশারী।


**মোরাল:**

বাধা আসবেই, কিন্তু সেই বাধাকে অতিক্রম করে নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য অদম্য সাহস আর কর্মশক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

Post a Comment

Previous Post Next Post